দেশের বৃহত্তম এই পাইকারি বাজারের চিনি ব্যবসায়ী জানান, আগে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ টন চিনি বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টন।
চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেটের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল নোমান তিন সপ্তাহ আগে খোলা চিনি বিক্রি করেছিলেন ৯০ টাকা কেজিতে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে এই চিনির দাম বেড়ে গেছে কেজিতে ১৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজি দরে।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আবদুল্লাহ আল নোমান জানালেন, প্রতি কেজি চিনি কেনা পড়ছে ৯৮ থেকে ১০০ টাকা। কেনা দাম বেশি, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। এ ছাড়া চাহিদামতো চিনি পাওয়াও যাচ্ছে না।
কর্ণফুলী কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম নগরের বড় বাজারগুলোর একটি। সেখানে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম শতক ছুঁয়েছে। অলিগলি এবং ছোট বাজারগুলোয় চিনি বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। ১১৫ থেকে ১২০ টাকাও দাম হাঁকা হচ্ছে কোথাও কোথাও। দুই দিন ধরে দাম ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে রয়েছে। আবার গলির খুচরা দোকানগুলোয় কখনো চিনি পাওয়া যাচ্ছে, কখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
বাজারে খোলা সাদা চিনির চল বেশি। তবে লাল চিনির বিক্রিও এখন বাড়ছে। দোকানিরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যায় বাজারে। তবে খোলা সাদা চিনির বিক্রি সবচেয়ে বেশি।
চট্টগ্রাম নগরে খুচরা দোকানগুলোর মতো পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও চিনির সংকট রয়েছে বলে জানান সেখানকার ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের এ এম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মাহমুদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের অভাব ও লোডশেডিংয়ের কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে। মিল থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে কম। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান চিনির মাধ্যমে অন্য পণ্য তৈরি করে। এসব প্রতিষ্ঠান ও টিসিবি চিনি নিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে খুচরা ও পাইকারি বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
খাতুনগঞ্জের চিনির পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে এ বাজারে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ টন চিনি বিক্রি হতো। সেখানে এখন তা নেমে এসেছে ৪০ থেকে ৫০ টনে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না মেলায় এ সংকট দেখা দিয়েছি। তাতে দামও চড়া। খাতুনগঞ্জে সব মিলিয়ে ১০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান চিনি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। কমবেশি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রিই কমে গেছে।
এদিকে, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের জালাল স্টোর থেকে গতকাল চিনি কিনছিলেন বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইরফান উদ্দিন। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেজায় বিরক্ত তিনি। ইরফান বলেন, এ দেশে কখন কোন পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তা বোঝা বেজায় মুশকিল।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এই চিনির প্রায় পুরোটা বিদেশ থেকে আমদানি করে পরিশোধন করা হয়। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগে থেকেই চিনির দাম বাড়ছিল। তবে দুই সপ্তাহ আগে থেকে সরবরাহে ঘাটতি শুরু হয়। তাতে সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
চিনির সংকট কাটাতে সরকারের আমদানি করা দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিনির দাম কমে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ঘটছে তার উল্টো। দাম যখন বাড়ানো দরকার, সরকার তখন বাড়ায় না। আবার যখন কমানো উচিত, তখন কমে না। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনও এখন চিনি দাম বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ে। এখন কোনোভাবেই দাম বাড়ানো যাবে না। সরকার দাম বাড়িয়ে দিলে চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে।’